দরজার ক্ষেত্রে চৌকাঠ সবথেকে মজবুত অংশ, যেটা ইটের ওয়ালের সাথে ৬ থেকে ৭টা ক্লাম্পের সাথে আটকানো থাকে, চৌকাঠ যদি ৪ ফুটের চেয়ে বেশি চওড়া হয়, দুই পাশে ৩ টা করে ক্লাম্প লাগানো হয় এবং উপরে একটা ক্লাম্প লাগানো হয়, যাতে করে উপরের অংশটি ঝুলে না যায়। পুরত্ত সাধারণত ৫" দেয়ালের জন্য ২.২৫" x ৫.৭৫" হয়ে থাকে। এটার ৩ টি অংশ থাকে, দুই পাশের দুইটি কাঠ একই ৭ ফুট লম্বা এবং উপরের অংশটা প্রয়োজন মত কম বা বেশি হয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ২.৫ ফুট এবং সর্বোচ্চ ১০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ৩টি অংশ দুইটি ডভটেইল জয়েন্টের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়। ডেলিভারির পূর্বে আমরা এই জোরাগুলি ফেভিকল আঠা এবং পেরেক দ্বারা সংযুক্ত করে থাকি, দুইটি কাঠের টুকরা দ্বারা উপরের দুইটি ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল নিখুঁত করে থাকি, একটি কাঠের টুকরা মাঝখানে এবং অপরটি নিচে লাগিয়ে ৭ ফুট লম্বা চৌকাঠ দুটি সমান্তরাল করে থাকি। চৌকাঠের মধ্যে দরজা ঢোকার অংশটি বিট কেটে সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে এবং চৌকাঠে ধাক্কা খেয়ে আঘাত যাতে কেউ আঘাত প্রাপ্ত না হয় সে জন্য নিরাপদ করা হয়েছে। চৌকাঠের উপরের দুই পাশের ডভটেইল মেইল অংশটি ফেভিকল আঠা এবং কিছু পেরেক দ্বারা মজবুত ভাবে ফিমেল অংশের সাথে সংজুক্ত করা হয়।
চৌকাঠের ভিতরের অংশ, যেখানে দরজাটি লাগানো হয়, সেখানে একটা গ্রুভ কাটা হয়। যা সাধারণত ০.৫" x ১.৫" হয়ে থাকে। এই গ্রুভটি সুধু দরজা লাগানোর জন্নই কাটা হয়ে থাকে। দরজা যখন বন্ধ করা হয়, এই গ্রুভটার কারনেই কোন ডাকাত দরজা অথবা চৌকাঠ ভাঙ্গা ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেনা। দরজার একপাশে ৪ টি থেকে ৫টি কব্জা (মাঝে মাঝে ৬টিও লাগতে পারে, দরজার সাইজ এবং ওজনের উপর নির্ভর করে) দ্বারা দরজাটাকে ঝুলানো হয় আর অন্য পাশে একটি তালা এবং দুইটি ছিটকানি লাগানো হয়। দরজা ফিটিংএর সময় সাধারণত ০.৫ সুতা ফাঁক রাখা হয়। যা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে দরজার বৃদ্ধি এবং সংকোচন সমন্বয় করে নেয়, যা আমাদের দেশের আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সাধারণত দুই ধরনের পুরুত্তের চৌকাঠ ব্যাবহার করা হয়। এক ধরনের হচ্ছে ২.২৫" x ১১.৭৫", যা ৫"দেওয়ালের জন্য প্রযোজ্য, এবং অন্যটি হচ্ছে ২.২৫" x ৫.৭৫" যা ১০" ইটের দেয়ালের জন্য প্রযোজ্য। ২.২৫" x ১০.৭৫" পুরুত্তের চৌকাঠটি সাধারণত মেইন সৌন্দর্য বর্ধনীও দরজার জন্য বেবহ্রিত হয়। চৌকাঠ সাধারণত মেহগিণী, বার্মা টিক, চিটাগং শিলকরাই, টিক চাম্বুল, চিটাগং টিক এবং লোহা কাঠের হয়ে থাকে।
আমাদের জানামতে যশোরের মেহগিনী আমাদের অন্যান্য একাকার মেহগিনীর চেয়ে উন্নত। অন্যান্য এলাকার মেহগিনী কাঠে সাধারণত গুছানো ফাইবার থাকেনা, রঙ ফ্যাঁকাসে হয়, সাঁর এবং পলের মধ্যে রঙ এবং গুনগত মানের অনেক পার্থক্য হয় এবং পরিপক্বতা আসতে অনেক সময় লেগে যায়। অপরিকল্পিতভাবে রোপণ করা গাছগুলির গোরা মোটা হয় অনেক এবং আগা হয় চিকন, এতে কাঠের গুনগত মানও খারাপ হয় এবং উৎপাদন ও কম আসে।
যশোরের মেহগিনীগুলো পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা। যেহেতু এই এলাকার কাঠের গুনগত মান ভালো হয়, কৃষকরা সেই কারনে দামও ভালো পায়, আর তাই তারা রবিশস্যের মত পরিকল্পিতভাবে রোপণ করেন এবং যত্ন নিয়ে থাকেন। অধিকাংশ সময়ই তারা পরিপক্বতা না আসা পর্যন্ত তারা গাছগুলি কাটেনা।
যশোর মেহগিনী কাঠের সাঁর এবং পলের মধ্যে তেমন একটা রঙ্গের এবং গুনগত মানের পার্থক্য হয়না, ঠিক অনেকটা গামারি কাঠের মত। গামারি কাঠের যেমন পুরোটাই সাদা, সাঁর এবং পলের মধ্যে কোন পার্থক্য বুঝা যায়না, ঠিক তদ্রুপ যশোরের মেহগিনী পরিপক্ক হলে সাঁর এবং পলের রঙ এবং গুনগত মানের কোন পার্থক্য থাকেনা। এই এলাকার মেহগিনী পরিপক্ক হতে সময়ও লাগে কম, মাটির কারনে। যেহেতু গাছগুলি পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা, সেই কারনে গাছগুলি হয় অনেক লম্বা, ফাইবারগুলো হয় সোজা, গোরা এবং আগার মধ্যে সাইজের তেমন একটা পার্থক্য থাকেনা, আর তাই উৎপাদন হয় অনেক বেশি। সমস্যা একটাই, দাম একটু তুলনামুলকভাবে বেশি।
মেহগিনী চৌকাঠ লাগানোর আগে বিটোমেন ও পলিশ অবশ্যই করতে হবে।
চিটাগাং শিলকরাই সুধু চিটাগাংএই হয়। চিটাগাংএর লোকেশনের পার্থক্যের কারনে রঙ কালো এবং একটু হাল্কা রঙ্গের হতে পারে, কিন্তু গুনগত মান একই। শিলকরাই বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো জায়গায় জন্মালে তাকে কালিকরাই বলা হয়। গুনগত মান হয় অনেক অনুন্নত, যা চৌকাঠ তৈরির ক্ষেত্রে রিস্কি, বাঁকা হয়ে যেতে পারে, পোকাও ধরতে পারে। আমরা কাঠের ছবি দিলাম, এতে করে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন।
চিটাগাং শিলকরাই অবশ্যই পল্মুক্ত হতে হবে, পল থাকলে তা সুধু পোকাই ধরেনা, খোসেও পরে যায়। সিজন অবশ্যই করতে হবে এবং ময়েশ্চার ১৪% এ রাখতে হবে। চৌকাঠ লাগানোর আগে অবশ্যই পলিশ ও পিছনে বিটোমেন লাগাতে হবে। না হলে কিউরিং এর সময় স্পট হয়ে বিশ্রী হয়ে যাবে, এমনকি বেঁকেও যেতে পারে।
কাজেই, পলিশ এবং বিটোমেন অবশ্যই ফিটিং করার আগে লাগাতে হবে।
টিক চাম্বুল আসে বার্মা থেকে। আমাদের দেশেও টিক চাম্বুল হয় তবে চিটাগং এর টা অনেক ভালো হয়। এখন মার্কেটে চিটাগং টিক চাম্বুল সহজলভ্য নয়। বার্মার টিক চাম্বুল দেখতে অনেক সুন্দর, সিজন করলে চৌকাঠের জন্য অনেক ভালো। দরজা তৈরি করতে গেলে সিজন করার পরেও কিছুটা সমস্যা হয়, অনেক সময় একটু বেঁকেও যায়, বারা-কমা অনেক বেশি হয়। ভিতরের দরজাগুলোতে সমস্যা কম হয়। কিছু কিছু মডেল আছে, সেগুলোতে সমস্যা খুব কম হয়। সেজন্য টিক চাম্বুলের পাল্লা বানানোর আগে আমরা চাই এ ব্যাপারে কাস্টোমারকে সঠিক পরামর্শ দিতে।
টিক চাম্বুল কাঠে আরোও একটি সমস্যা থাকে। দরজা তৈরির আগে এবং পরে কিছু কিছু কাঠ আস্তে আস্তে ডার্ক রঙ হয়ে যায়, দেখতে একটু অসুন্দর লাগে, চৌকাঠের ক্ষেত্রেও রঙ্গের পরিবর্তন হয়, কিছুদিন পর আর চোখে লাগেনা। আমরা বার্মা টিকের পাল্লায় অনেক সময় টিক চাম্বুলের চৌকাঠ লাগিয়ে থাকি, দেখতে অনেকটা কাছাকাছি, দামেও একটু সস্তা, তাই।
অবশ্যই অবশ্যই পলিশ এবং বিটোমেন দিয়েই লাগাতে হবে, তা না হলে কিউরিং করার পর সাতরঙ্গা হয়ে যাবে। এক অংশ দেখতে মনে হবে বার্মা টিক, এক অংশ টিক চাম্বুল ও খানিকটা শিলকরাইএর মত কালো হতে পারে। যা ঘটে তাই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
চিটাগাং সেগুন চিটাগাং এই হয়। এই সেগুনের মান অনেক উন্নত, ফাইবারও অনেক সুন্দর, কিন্তু বিভিন্ন কারনে বড় গাছগুলো আর কোনভাবেই কাটা হয়না। ছোট ও মাঝারী গাছগুলোই মার্কেটে পাওয়া যায়, যে কাঠগুলোর গুনগত মান খুব ভালো হয়না। আমরা অনেক চেষ্টা করেও পলমুক্ত করতে পারিনা। আমাদের সংগ্রহ করা চিটাগাং সেগুনেও ১-২% পল থাকে। অন্যান্য জায়গায় ৩০% পর্যন্ত পল থাকে।
চিটাগাং সেগুনের পলে পোকা ধরেনা, কিন্তু যতই রঙ দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করি, বুঝা যায় এবং দেখতে খারাপ লাগে। কাস্টমারের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে আমরা তাদেরকে বার্মাটিক ব্যাবহার করার পরামর্শ দেই।
পলিশ এবং বিটোমেন ছাড়া কোনভাবেই লাগানো উচিত নয়। না হলে কিউরিং করার সময় পল অংশ কালচে হয়ে যায় এবং সারি অংশের রঙ নষ্ট হয়ে যায়।
এই কাঠটি বার্মা থেকে ইম্পোরট করা হয়। বিভিন্ন গ্রেডের হয়ে থাকে, যেমনঃ A, B, C, D গ্রেড। আমাদের দেশে সাধারণত A গ্রেডের কাঠগুলো আসেনা। সেগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন ধনী দেশে রপ্তানি হয়। আমাদের দেশে আসে B, C ও D গ্রেডের কাঠ। B গ্রেডের কাঠগুলোও অনেক সুন্দর, যা A গ্রেডের কাঠের চেয়ে একটু ডার্ক, এতে কালচে রঙ্গের কিছু লম্বা ফাইবার দেখা যায়। আমরা সরাসরি ইম্পোরট বা ট্রাক ভর্তি করে চিটাগাং থেকে কাঠ ক্রয় করতে পারিনা। যেহেতু আমরা সুধু B গ্রেডের কাঠই সংগ্রহ করে থাকি, তাই আমাদের একজন মিডেল ম্যান এর উপর নির্ভর করতে হয়। সে বিভিন্ন স-মিল থেকে আমাদেরকে সুধু B গ্রেডের কাঠ সংগ্রহ করে দেয়।
বার্মা টিক অনেক সুন্দর কাঠ। আমাদের দেশে এটা সবথেকে ভালো কাঠ বলতে পারেন। অধিকাংশ বাড়ি ও ফ্ল্যাট মালিকদের সখ থাকে পুরো বাড়িতে বার্মা টিকের পাল্লা ও চৌকাঠ লাগানোর। সাদ্ধে না কুলালে কমপক্ষে মেইন গেইট টা বার্মা টিকের লাগাতে চেষ্টা করে। বার্মা টিকের দরজা মেইন গেইটে লাগালে বাড়ির মান বেড়ে যায়।